কলমি শাক চেনার উপায়
কলমি শাকের পাতা গাঢ় সবুজ রঙের, হৃদপিণ্ডের আকৃতির মতো এবং বেশ মসৃণ। এর কাণ্ড নলাকার ও ফাঁপা, যা সহজেই ভেঙে যায়। এটি সাধারণত ভেজা মাটি বা জলের মধ্যে লতিয়ে লতিয়ে বেড়ে ওঠে। শহরাঞ্চলে এখন অনেক সবজির দোকান বা সুপার শপেও কলমি শাক কিনতে পাওয়া যায়।
পুষ্টিগুণে ভরপুর কলমি শাক
কলমি শাক পুষ্টির একটি পাওয়ারহাউস। এতে রয়েছে:
· ভিটামিন এ: চোখের স্বাস্থ্যরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে indispensable।
· ভিটামিন সি: ত্বক, হাড় ও সংযোজক টিস্যুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
· আয়রন: রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
· ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁত মজবুত করে।
· ফাইবার: হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
· অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
আয়ুর্বেদ ও ভেষজ গুণ
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কলমি শাকের বিশেষ কদর রয়েছে। এটিকে শীতলকারক, পিচ্ছিল এবং ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
· হজমের সমস্যায়: কলমি শাকের প্রাকৃতিক পিচ্ছিল উপাদান পেটের আলসার, অ্যাসিডিটি এবং হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
· ডিহাইড্রেশন রোধে: এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা গরমের দিনে শরীর আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
· ত্বকের জন্য: কলমি শাকের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ব্রণ, একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যা কমাতে কার্যকরী।
· মূত্রবর্ধক: এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।
· রক্তশূন্যতা রোধে: আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।
রান্নার নানান উপায়
কলমি শাক দিয়ে খুব সহজেই মুখরোচক রান্না করা যায়। এর স্বাদ কিছুটা মিষ্টি এবং টক্সট্যুর অনন্য।
1. সাধারণ ভাজি: সরষে বা পেয়াজ দিয়ে কলমি শাক ভাজি করে খাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি। এটি ভাতের সাথে দারুণ যায়।
2. ডালের সাথে: মুগ ডাল বা মসুর ডালে কলমি শাক ফেলে দিলে ডালের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ দুটোই বেড়ে যায়।
3. দইয়ের সাথে: কিছু অঞ্চলে কলমি শাক সিদ্ধ করে দই, মরিচ ও সরষে বাটা দিয়ে ঘণ্ট করে খাওয়া হয়, যা গরমের দিনে খুবই আরামদায়ক।
4. মাছ বা চিংড়ির সাথে: ইলিশ মাছ বা চিংড়ির সাথে কলমি শাকের ঝোল একটি অতুলনীয় পদ। শাকের স্যাঁড়সেঁড়ে ভাব মাছের স্বাদের সাথে মিশে অনন্য আস্বাদ তৈরি করে।
5. পাকোড়া বা ভাজা: বেসনে মাখিয়ে কলমি শাক দিয়ে পাকোড়া বা ভাজা বানানো যায়, যা শিশুদের
কিছু সতর্কতা
· কলমি শাক কেনার সময় বা তুলে আনার সময় খেয়াল রাখুন যেন খুব বেশি পোকা বা দাগ না থাকে।
· রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে যাতে কোনো ময়লা বা কাদা না লেগে থাকে।
· যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে, তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
উপসংহার
কলমি শাক শুধু একটি weeds নয়, এটি আমাদের প্রকৃতি প্রদত্ত একটি অমূল্য উপহার। এর সহজলভ্যতা, সস্তা দাম এবং অসাধারণ পুষ্টিগুণ এটিকে সবার থালার যোগ্য একটি উপাদান করে তুলেছে। তাই, এই মৌসুমে বাজারে কলমি শাক দেখলে একবার করুন। আপনার খাদ্যতালিকায় এই পুষ্টিকর শাকটি যোগ করে আপনি পেতে পারেন উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।কলমি শাক: পুষ্টির ভাণ্ডার ও স্বাস্থ্যের সহায়ক
বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী শাকটিকে হৃদয়ে ধারণ করুন, সুস্থ থাকুন।
0 Comments